দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতেই বাড়তে থাকে শীতের প্রকোপ। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে শীত। এমন পরিবেশে শীতের পিঠা খেতে কার না ভালো লাগে। আর শীত এলেই যেন ভোজনরসিক বাঙ্গালিকে চেনা যায় নতুন রূপে। কারণ এ সময় খাবারের তালিকায় যোগ হয় নানা ধরনের পিঠাপুলি। তাই শীতের বিকাল কিংবা সন্ধ্যার হিমেল হাওয়ায় খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে পিঠা খেতে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন উপজেলার বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে ও মাহফিল ময়দানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পিঠার দোকানগুলোতে। যে কারণে প্রতিবছরই শীতের আমেজ দেখা দিতেই বিভিন্ন জনবহুল জায়গায় পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেন মৌসুমী দোকানিরা। নতুন চাল না এলেও পুরোনো চাল দিয়েই চালিয়ে নিচ্ছেন বিকিকিনি। আর সেই পিঠা খেয়ে শীতের আগমনকে তরান্বিত করার চেষ্টা করছেন উপজেলার মানুষেরা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই শীতের আগমন বার্তা একটু হলেও মিলছে গ্রামে। সেই বার্তাকে কাজে লাগিয়ে উপজেলার প্রাণকেন্দ্র, এমনকী গ্রামের মধ্যে রাস্তার মোড়ে পিঠা তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে বসছে বিক্রেতারা। এসব দোকানে মিলছে, ভাপা, চিতই, জামাই, কুলি, তেলের পিঠাসহ নানা ধরনের পিঠা। তবে এর মধ্যে ভাপা পিঠা ও নানা রকম ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠার কদর একটু বেশি। দাম নাগালের মধ্যে থাকায় স্বাদ নিতে দাঁড়িয়ে পড়ছেন অনেকেই। প্রতিদিন উপজেলা সদরসহ চৌঠাইমহল বাসষ্টান্ডে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে পিঠা বিক্রি ও খাওয়ার পালা। কারণ শীতের সকালে বা সন্ধ্যায় গরম গরম ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠার যে স্বাদ সেটা অন্য সময় পাওয়া যায় না। এসব দোকানে প্রতি পিস ভাপা পিঠা ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১৫ টাকার পিঠা স্পেশাল। আর শীতে যত রকমেরই পিঠা তৈরি হোক না কেনো ভাপা পিঠার সাথে অন্য কোন পিঠার তুলনাই হয় না। এই পিঠা বিক্রি করেই শীতের সময় অনেকে সংসার চালান। দক্ষিনাঞ্চলের গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে না হলেও শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে দোকান নিয়ে বসে পড়েছেন মৌসুমী পিঠা ব্যবসায়ীরা। অনেকেই মৌসুমী এই ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। তেমন একটা পুঁজি লাগে না বলে সহজেই এ ব্যবসা শুরু করেন অনেকেই। এসব দোকানগুলোতে দেখা যায় পিঠা পাগল লোকজনদের উপচে পড়া ভিড়। বিক্রেতারাও আনন্দের সাথে ভাপা ও চিতই পিঠা বিক্রি করছেন। উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, কালিবাড়ি পুকুর পারে, নাজিরপুর মহিলা কলেজের সামনে, বাবুরহাট ব্রীজের কাছে, শ্রীরামকাঠী তরকারি বাজারের কাছে, নাজিরপুর চৌঠাইমহল বাসষ্টান্ডে, হাসপাতাল বাসষ্টান্ডে, সাতকাছিমা বাজারে, মাটিভাংগা ব্রীজেরকাছেসহ উপজেলার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার অলিগলির মুখে এই পিঠার দোকান দেখা যায়। পিঠা বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, মৌসুমি এই পিঠার প্রতি অনেকের বেশ আগ্রহও দেখা যায়। বছরের সাময়িক সময়ের এই পিঠার বাজার এখন থেকেই জমে উঠেছে, বিশেষ করে সন্ধ্যার সময় এই পিঠার চাহিদা বেশি থাকে বলে জানান তিনি। উপজেলার চৌঠাইমহল বাসষ্টান্ড এলাকার পিঠা বিক্রেতা মো. লোকমান হোসেন বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও রয়েছে ক্রেতার ভিড়। প্রতিনিয়ত ক্রেতার ভিড় বেড়েই চলেছে। এতে আয় রোজ-গারও মোটামুটি ভালোই। তিনি আরও জানান, যেহেতু ভাপা পিঠার ব্যবসা শীতকালে ছাড়া অন্য কোন সময় হয় না, তাই এই সময়টাই এই ব্যাবসার জন্য ভালো সময়। ক্রেতা শাহিনুজ্জামান বলেন, শীত মানেই পিঠা খাওয়ার ধুম। তবে সেই পিঠা যদি হয় ভাপা, তাহলে তো আর কোন কথাই নেই। দিনের শেষে বন্ধুদের নিয়ে সন্ধ্যায় ভাপা পিঠা খেতে আসি। এতে করে সবার মাঝে একটু ভালো লাগে। ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবছরের চেয়ে এবছর সব জিনিসের দাম দ্বিগুন থাকায় ১০ টাকার নিচে কোন পিঠা বিক্রি করছেন না তারা। এ বছর ‘ডিম চিতই’ প্রতিটি পিস ৩০ টাকা, ভাপা পিঠা ১০ টাকা, সাজের চিতই ১০ টাকা, আর স্পেশাল চিতই পিঠা বিক্রী হচ্ছে ১৫ টাকায়।
Leave a Reply